লেখকঃ আবু রায়হান
রাশিচক্র :সত্য না ভন্ডামি?
★গ্রহ নক্ষত্র কি আমাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে জানে?
Part-1
১।
আমরা পর্বগুলোতে জ্যোতিষশাস্ত্র মিথ কে খন্ডন করতে গিয়ে পড়তে পড়তে শিখে নিবো/জেনে নিবো একটুখানি পৌরাণিক কাহিনীর ফাঁকে ফাঁকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ৫০-৬০টির মত বেসিক জিনিস বা টার্ম যা সচরাচর আমাদের প্রায় মানুষের অজানা।
__________
জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy) আর জ্যোতিষশাস্ত্র/জ্যোতিষবিদ্যা (Astrology) দুটো প্রায় একই শব্দ। তবে শব্দ দু'টোর মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy)
খুব মজার ও রহস্যময় একটা জিনিস।কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক সিম্পল জিনিস সম্পর্কে আমরা জানিনা যার ফলে আমাদের মাঝে ভর করে জ্যোতিষবিদ্যা নামক অপবিজ্ঞান(Pseudoscience) ।আপনি যদি নূন্যতম ধারণাও রাখেন তবে বুঝে যাবেন জ্যোতিষবিদ্যা /জ্যোতিষশাস্ত্র (Astrology)কতটা হাস্যকর এবং ভুয়া জিনিস। তবে ভুয়া হলেও এতে থাকা কাহিনীগুলো খুবই উপভোগ্য।উপভোগ্য হওয়ার পেছনের কারণ হলো -আমরা নানি,দাদি,মা,বোনের কাছে রূপকথার গল্প শুনে শুনে ছোট থেকেই এর প্রেমে পড়ে গেছি।
২।
জ্যোতির্বিজ্ঞান (Astronomy)
এবং জ্যোতিষশাস্ত্র/জ্যোতিষবিদ্যার মাঝে(Astrology)
কিছু পার্থক্য:
১।
জ্যোতিষবিদ্যা যাঁরা চর্চা করেন, তাঁরা জ্যোতিষী এবং জ্যোতির্বিদ্যা যাঁরা চর্চা করেন তাঁরা জ্যোতির্বিদ। জ্যোতিষী হলেন কিরো, ভৃগু, পরাশর, অমুক সম্রাট, তমুক সমুদ্ররা,রাস্তার,বড় বড় মার্কেটের ভন্ড আঙটি বিক্রেতারা । অপরদিকে জ্যোতির্বিদ হলেন উইলিয়ম হার্শেল, মেঘনাদ সাহা, আর্যভট্ট, গ্যালিলিও, কোপারনিকাস প্রমুখ।
২।জ্যোতির্বিদ্যার বিষয় সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, ছায়াপুঞ্জ, উল্কা, ধূমকেতু। জ্যোতিষবিদ্যার বিদ্যার বিষয় হাত-পা-মুখ গুনে ব্যক্তির ভূত-ভবিষ্যত বলে দেওয়া।
৩।
জ্যোতির্বিদ্যায় সূর্যের চারপাশে পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহরা ঘুরপাক খায়।জ্যোতিষবিদ্যায় পৃথিবীর চারপাশে সূর্য সহ অন্যান্য গ্রহরা ঘুরপাক খায়।
৪।
জ্যোতিষবিদ্যায় পৃথিবী নামে কোনো গ্রহের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানে/জ্যোতির্বিদ্যায় পৃৃথিবী একটি গ্রহ।
৫।
জ্যোতির্বিদ্যায় উপগ্রহ আছে-যেমন চাঁদ,ডিমোস,ফেবোস ইত্যাদি।
কিন্তু
জ্যোতিষবিদ্যায় কোনো উপগ্রহ নেই।আবার চাঁদও জ্যোতিষবিদ্যায় একটি গ্রহ!!
৬।
জ্যোতির্বিদ্যায় রাহু ও কেতুর কোনো অস্তিত্ব নেই, জ্যোতিষবিদ্যায় রাহু ও কেতুর অস্তিত্ব প্রবল।
৭।
জ্যোতির্বিদ্যার গ্রহ বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন, প্লুটো ইত্যাদি। জ্যোতির্বিদ্যার গ্রহরা বালি-পাথর-গ্যাসীয় মহাজাগতিক নিথর বস্তু বিশেষ। জ্যোতিষবিদ্যার গ্রহ সূর্য বা রবি, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু এবং কেতু।
৮।
জ্যোতিষবিদ্যার গ্রহরা সবাই বিশেষ অলৌকিক ক্ষমতাধর, তাদের কোপে মানুষের সর্বনাশ হয়।
জ্যোতির্বিদ্যায় এসব ভন্ডামি ও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত।
৯।
জ্যোতিষবিদ্যায় গ্রহরত্ন, গ্রহমূল, অষ্টধাতুর ব্যবহার আছে। জ্যোতির্বিদ্যায় এসবের কোনো ব্যবহারই নেই।
১০।
জ্যোতিষবিদ্যায় মামলা-মোকদ্দমা জিতিয়ে দেওয়া, বিয়ে হওয়া, পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়া, চাকরি পাইয়ে দেওয়ার দাবি করে। জ্যোতির্বিদ্যায় এসবের কোনো চর্চা নেই।
১১।
জ্যোতির্বিদ্যায় পদার্থবিদ্যা, গণিত, দূরবীক্ষণ যন্ত্র প্রয়োজন হয়। জ্যোতিষবিদ্যায় কোনো বিদ্যাই লাগে না -- লাগে ব্যক্তির দুর্বলতা খুঁজে বের করার ক্ষমতা, কৌশল-চাতুরতা, সম্মোহনী আর রত্ন-মাদুলি-কবচ গছানোর ক্ষমতা,আর লাগে কিছু ভুয়া বই মুখস্থ করার ক্ষমতা।
১২।
জ্যোতিষবিদ্যায় গ্রহ-নক্ষত্র দেখতে দূরবীক্ষণ যন্ত্র লাগে না
দূরবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়াই বহুদূরে থাকা ভবিষ্যত আর অতীত দেখাই জ্যোতিষ।
১৩।জ্যোতিষবিদ্যায় রাহু চাঁদ, সূর্যকে গ্রাস করে ফেলে যাকে তারা বলে চন্দ্রগ্রহন ও সূর্যগ্রহণ। জ্যোতির্বিদ্যায় এমন আজগুবি কথা নেই।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার প্রয়োজনেই কিছু পৌরাণিক কাহিনী বর্ণনা করতেই হয়।আশা করি বিরক্ত হবেন না।
পৌরাণিক কাহিনিতে রাহু জনৈক অসুর/দানববিশেষ। বলা হয়েছে দানব বিপ্রচিত্তির ঔরসে ও সিংহিকার গর্ভে এর জন্ম হয়। উল্লেখ্য, সমুদ্রমন্থন শেষে উত্থিত অমৃত অসুরদের বঞ্চিত করে দেবতারা পান করেছিল।
মন্থন হলো ঘুঁটা দেওয়ার মত ব্যাপার।ডাল ঘুুঁটা দেওয়ার সময় দুই হাতের তালুতে ঘুঁটনি রেখে যেমন ডাল ঘুঁটা হয় ঠিক তেমনি কোনো দন্ড যেমন ধরেন পর্বত কে দন্ড হিসেবে ব্যবহার করে সমুদ্রকে ঘুঁটা দেওয়া(।তথ্যসূত্র :পুরাণ ও জ্যোতির্বিজ্ঞান গ্রন্থ)
মূল উদ্দেশ্য ছিলো সমুদ্রে ঘুঁটা দিয়ে অমৃত তুলে আনা যেন চিরজীবী হতে পারেন ওনারা। ইনি মানে রাহু কৌশলে গোপনে অমৃতপান করতে থাকলে চন্দ্র ও সূর্য তাদের ভাস্বর প্রকৃতি (মানে আলোকিত করার প্রবণতা)গুণে রাহুকে চিনতে পেরে অন্যান্য দেবতাদের জানান।চন্দ্র, সূর্য কিন্তু দেবতা।
এই সময় বিষ্ণু সুদর্শন চক্র ছুঁড়ে রাহুর মাথা কেটে দেন। কিছুটা অমৃত পান করায় এই দানব ছিন্নমস্তক হয়ে অমরত্ব লাভ করেন। এর মস্তকভাগ ‘রাহু’ (Head) ও দেহভাগ ‘কেতু’ (Tail) নামে পরিচিত! আর এ রাহু -কেতু জ্যোতির্বিদ্যায় মহাকাশে খ গোলকে দুটি পাঁত (Nodes) বিন্দু।জ্যোতির্বিদ্যায় Equinox
1.Vernal Equinox(বসন্ত বিষুব/মহাবিষুব)
2.Autumnal Equipnox(শারদ বিষুব/জলবিষুব) ।সহজ ভাবে বলতে খ-গোলকে এই দুটি বিন্দু হচ্ছে বছরে দুইদিন বিষুববৃত্তের উপর সূর্যের অবস্থান।এ দুই দিন হচ্ছে ২১ শে মার্চ(দিন রাত্রি সমান) এবং ২৩ শে সেপ্টেম্বর।
(সামনে বিস্তারিত আসবে)
সেই থেকে রাহু এবং চন্দ্র ও সূর্যের সঙ্গে চিরশত্রুতা শুরু হয়। এরপর থেকে সুযোগ পেলেই রাহু চন্দ্র ও সূর্যকে গ্রাস করার জন্য অগ্রসর হয়। কিছুটা গ্রাস করতে সক্ষম হলেও তার কর্তিত দেহ থেকে চাঁদ বা সূর্য বেরিয়ে আসে। রাহুর এই গ্রাসকালীন সময়ে গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় বলে অনেকে বিশ্বাস করেন। অর্থাৎ রাহু যখন সূর্যকে গ্রাস করে তখন সূর্যগ্রহণ হয়। অন্যদিকে রাহু যখন চন্দ্রকে গ্রাস করে তখন চন্দ্রগ্রহণ হয়। জ্যোতিষীরা এই মতই বিশ্বাস করেন এবং বিশ্বাস করান। কিন্তু জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন সৌরজগতে সূর্যকে ঘিরে উপবৃত্তাকার পথে আবর্তিত হচ্ছে পৃথিবী, আবার পৃথিবীকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে চন্দ্র। চন্দ্র এবং পৃথিবীর এই আবর্তন চলার সময় কখনো-কখনো পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্যের মাঝখানে একই সরল রেখায় অবস্থান নেয়। এই সময় পৃথিবীর মানুষেরা চন্দ্রের আলো দেখতে পায় না। অর্থাৎ, পৃথিবীর ছায়ায় চাঁদ ঢাকা পড়ে যায়। পৃথিবী চাঁদের চেয়ে বড়ো হওয়ায় পৃথিবীর ছায়া চন্দ্রপৃষ্ঠকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে। এই কারণে চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর কোনো কোনো অংশে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা যায়। যেখানে সূর্যগ্রহণ পৃথিবীর খুব অল্প জায়গা থেকেই দেখা যায়, সেখানে চন্দ্রগ্রহণ পৃথিবীর সর্বত্র থেকেই দেখা যায়। রাহু গোমেদ (রত্ন Gomed) বা গোয়া গোমেদ (উপরত্ন) বা রূপো (ধাতু) বা শ্বেতচন্দন (মূল) বা ছিন্নমস্তা (কবচ) বা ৮ মুখী/১৫ মুখী (রুদ্রাক্ষ) এবং কেতুকে বৈদুর্যমণি (Cats eye) বা সিসা/রূপো (ধাতু) বা অশ্বগন্ধা (মূল) বা ধুমাবতী (কবচ) বা ৯ মুখী/১৬ মুখী (রুদ্রাক্ষ) বশে রাখার জন্য জ্যোতিষীরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
১৪।
জ্যোতিষীগণ মনে করেন এইসব গ্রহদের রশ্মিও আছে। তবে এই রশ্মি নাকি দেখা যায় না। দেখা যায় না, কিন্তু আছে – আধ্যাত্মিক বা Spiritual রশ্মি বলে কথা ! দেখা যায় না বটে, কিন্তু জ্যোতিষীরা সেই রশ্মি আবার গুণেও ফেলেছেন। যেমন – রবির ২০টি রশ্মি, মেষের ৮টি, মঙ্গলের ১০টি, বুধের ১০টি, বৃহস্পতির ১২টি, শুক্রের ১৪টি, শনির ১৬টি ইত্যাদি। এমন রশ্মির কথা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন না। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন আলফা, বিটা, গামা, কসমিক ইত্যাদি মহাজাগতিক রশ্মির কথা।
১৫।
আরও আছে জ্যোতিষীদের ব্যাপার-স্যাপার। যেমন গ্রহদের স্বক্ষেত্র বা বাসস্থান বা জন্মভূমিও আছে। যেমন ধরুন – (১) সূর্য বা রবির স্বক্ষেত্র কলিঙ্গ (বর্তমানে ওডিশা), (২) চন্দ্রের যবন দেশ (গ্রিস ?), (৩) মঙ্গলের অবন্তী, (৪) বুধের মগধ (পাটনা ও গয়া), (৫) বৃহস্পতির সিন্ধুদেশে, (৬) শুক্রের ভোজকটকে, (৭) শনির সৌরাষ্ট্রে (বর্তমানে গুজরাট), (৮) রাহুর অম্বর অথবা সিংহল (বর্তমানে শ্রীলঙ্কা) এবং (৯) কেতুর (না, জন্মভূমির খোঁজ পাওয়া যায়নি)।মহাকাশের বেশির ভাগ গ্রহদের জন্মস্থান ভারতেই ? মহাকাশের বাকি অংশে শূন্য কেন?
জ্যোতিষীয় ব্যাবসার ক্ষেত্রে মূল যে চারটি বিষয় জ্যোতিষীরা মাথায় রাখেন, সেগুলি হল – (১) গ্রহ, (২) নক্ষত্র, (৩) গণ (৪) রাশি এবং (৫) লগ্ন।
এসব নিয়ে সামনে আলোচনা করবো।
কেন এই জ্যোতিষবিদ্যা?
--
অসীম আকাশ, অসংখ্য নক্ষত্র,চাঁদ মামা,সুয্যিমামা মানুষকে বিমুগ্ধ কল্পনাপিয়াসী করে আসতেছে সেই প্রাচীন কাল থেকেই। মানুষ তাকিয়ে থেকেছে আর দেখেছে সেগুলি অবস্থান, নির্ভুল গতিবিধি, নদীর জোয়ার ভাটায় ও ঋতুভিত্তিক পরিবর্তনে তাদের প্রভাব। আর দিনে দিনে মানুষেরা কৌতুহলী হয়েছে আরও বেশি করে জানার জন্যে। কিন্তু তা বুঝতে গিয়ে,কৌতুহলী হয়ে কিছু কিছু মানুষ সত্যের বিপরীতে মিথ্যাকেই বেশি আপন করে নিয়েছে। যদিও এই নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহগুলির সরাসরি কিছু প্রভাব আমাদের পৃথিবীতে হয়েছে (যেমন জোয়ার ভাটা,দিক নির্দেশ ইত্যাদি)
কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই আমরা ভুল ভাবে তা বুঝে থাকি। আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র সূর্য। আর তারই চারিদিকে পৃথিবী তার নিজ কক্ষ পথে ঘুরছে। এই সূর্যই মানুষের সময় নির্ধারনের মৌলিক একক গুলিকে অর্থাৎ আমাদের দিনের এবং বছরের ব্যপ্তি- স্থির করে থাকে।কিন্তু এটা আমাদের থেকে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে রয়েছে। আর এর ব্যাস প্রায় ১৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। অন্যদিকে, ঋতুর জন্য, জোয়ার ভাটার জন্য, রয়েছে সূর্যের পাশাপাশি চাঁদও। আর দিক নির্নয় করার জন্য নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হল নক্ষত্র। এমন কি মহাকাশচারীদের মহাকাশযানও এই ভাবেই করে থাকে।
এই সমস্ত কারণে অনেকে ভাবে যে, গ্রহ-নক্ষত্র গুলি সময়, কাল, ঋতু এবং বিভিন্ন যৌক্তিক প্রাকৃতিক মহিমা প্রকাশ করার চেয়েও বেশি কিছু করে থাকে। অজ্ঞ মানুষ ভাবে হয়ত তারা আমাদের ভবিষ্যৎ দেখাতে পারে, সাবধান করতে পারে আমাদের আসন্ন বিপদ থেকে। এমনকি, তাদের প্রভার আমাদের মুক্ত করতে পারে সেই সমস্ত ক্ষতি থেকে যা আমাদের জীবনে এখনও শুরু হয়নি। অনেকেই জানেন যে, জীবনের পথ নির্দেশনার কাজে, শুভ-অশুভ লক্ষনের জন্য গ্রহ নক্ষত্র দেখার রীতির উৎপত্তি হয়েছিল সেই প্রাচীনকালেই। যীশুর জন্মের প্রায় ৩০০০ বছর আগে। সেই সময়ের প্রাচীন কালে মানুষেরা গ্রহ-নক্ষত্রের মনোযোগী পর্যবেক্ষক ছিলেন। গ্রহ-নক্ষত্রগুলির গতিবিধির ছক আঁকার, গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের তালিকা করার, ক্যালেন্ডার তৈরির এবং গ্রহ গুলি সম্পর্কে আগে থেকেই বলার বিষয়ে তাদের প্রচেষ্টা ছিল ; আর সেই প্রচেষ্টা থেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের উৎপত্তি হয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখা গেল জ্যোতিবিজ্ঞান আমাদের পরিবেশে সূর্য, চন্দ্র এবং এর প্রভাব সম্পর্কে বলার চেয়ে আরও বেশি বাড়িয়ে বলতে শুরু করলো। কিছু লোক এটা দাবী করেন যে, সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ, নক্ষত্র এবং এদের অবস্থান, বিন্যাস শুধু পৃথিবীতে বড় বড় ঘটনাগুলিকেই প্রভাবিত করে না, কিন্তু সেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তি বিশেষের জীবনকেও নিয়ন্ত্রন করে।মানে ভাগ্যকে প্রভাবিত করে।যেমন জন্ম,মৃত্যু,শুভ-অশুভ,বিয়ে,পদোন্নতি,জয় পরাজয় ইত্যাদি।
কিছু কিছু জ্যোতিবিদ্যা চর্চাকারীগন ভবিষ্যতের ঘটনাগুলি বা কোন ধরনের সাবধান বানী জানার মাধ্যম হিসাবে গ্রহ-নক্ষত্র গুলি ব্যবহার করে থাকেন, যেন যারা এগুলিকে বিশ্বাস করে তারা এর দ্বারা উপকৃত হতে পারেন।বলা হয় মুখ্য গ্রহ-নক্ষত্রগুলোর বিন্যাস লক্ষ করার ও সেগুলোর একটার সঙ্গে অন্যটার এবং পৃথিবী সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক গননা করার দ্বারা এই ধরনের তথ্য লাভ করা যায়। বলা হয় যে, নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিবিশেষের উপর সেগুলোর প্রভাব সেই ব্যক্তির জন্মের সময় গ্রহ-নক্ষত্রগুলোর বিন্যাসের উপর নির্ভর করে।
আগের দিনের জ্যোতিষশাস্ত্রের কথিত পন্ডিতেরা বিশ্বাস করত যে, পৃথিবী হল নিখিল বিশ্বের কেন্দ্র আর সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্রগুলি নিজ কক্ষপথে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। তারা আরও মনে করত যে, বার্ষিক সঞ্চারনের সময়ে সূর্য আকাশের নক্ষত্র পুঞ্জের মধ্য দিয়ে এক নির্দিষ্ট পথে ভ্রমন করত। তারা আপাতদৃষ্টিতে সূর্যের এই সঞ্চারন পথকে ”ক্রান্তিবৃত্ত” বলেছিল।সামনে বিস্তারিত আসতেছে এটা নিয়ে।
আর সেটাকে তারা ১২ টি বলয়ে বিভক্ত করেছিল। প্রতিটি অংশের নাম সেই অংশের নক্ষত্রপুঞ্জের নাম অনুসারে দেয়া হয়েছিল এবং তার মধ্য দিয়ে সূর্য গমন করত। অবশ্য বিজ্ঞানীরা তাদের প্রমানের দ্বারা দেখিয়েছেন যে, এই তথ্য মিথ্যা; সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে না কিন্তু পৃথিবী ঘোরে। এটা জ্যোতির্বিদ্যা/জ্যোতিষশাস্ত্রের উপরে একটা আঘাত হিসাবেই ধরা হয়।
মেসোপটেমিয়া থেকে এই মিথ্যা তথ্য সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে(মতভেদ আছে)।
http://historyworld.net/wrldhis/PlainTextHistoriesResponsive.asp?historyid=ac32
এছাড়া আরও একটা বিষয় বলা যায় যে, আপনি হয়ত আপনার জীবনে অনেকবার ভাগ্য গননা করিয়েছেন, যেভাবে তারা দাবী কওে সেইভাবে তারা কি নির্দিষ্ট করে আপনার ভবিষ্যৎ বলতে পেরেছে? তাই তো হাসান রাজা গেয়েছেন, “আগে যদি জানতো হাসন বাচঁবে কত দিন; বানাইতো দালান কোঠা করিয়া রঙ্গিন।”
মিথ্যার একটা আকর্ষন আছে যা মানুষকে জ্যোতির্বিদ্যার দিকে টেনে নেয়। অজানাকে জানার ইচ্ছা মানুষের চিরকালের অভ্যাস; আবার তা যদি হয় ভবিষ্যৎ জানার তবে সহজেই মানুষ প্রতারনায় পা বাড়ায়। মানুষের দূর্বলতা হল সে অজানাকে জানতে চায়। এমনকি তার নিজের ভবিষ্যৎকে। আর সেই দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে লোকেরা হাজার রকমের মিথ্যার পসরা সাজিয়ে বসে, দিনে দিনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। আর সাধারন মানুষ হচ্ছে নিঃস্ব। তাছাড়া এমনও হয় যে, লোকেরা জানে যে জ্যোতিবিদ্যা একটা প্রতারনায় পূর্ন ঝুড়ি তবুও লোকেরা এর দারস্ত হয়, এই আশায় যদি কিছু জানা যায়? তবে হয়তঃ নিজেকে রক্ষা রক্ষা করতে পারবো।
রাশিচক্রকে খন্ডন কিন্তু এখনো করিনি।জাস্ট কিছু পার্থক্য তুলে ধরলাম।
যাইহোক, আমাদেরকে কিছুটা জ্যোতির্বিজ্ঞা শিখতেই হবে এসব ভন্ডামিকে খন্ডন করতে চাইলে।কিছু টার্ম ক্লিয়ার না করলে রাশিচক্র খন্ডন বুঝতে পারা কঠিন হব।
তো,চলুন শুরু করি-
আজ শুধু দুইটা শব্দ নিয়ে আলোচনা করবো।বাকিগুলো পরের পর্বে।
১।
জ্যোতিষ্ক এবং খ বস্তুর মাঝে পার্থক্য:
জ্যোতিষ্ক:(Astronomical Objects)
মহাশূন্যে অবস্থিত বস্তুসমূহকে জ্যোতিষ্ক বা Astronomical Bodies বা স্বর্গীয় বস্তু বা Heavenly Bodies বলা হয়ে থাকে। পৃথিবী ছাড়া অন্য সব বস্তুই এর অন্তর্ভুক্ত।
খ-বস্ত/জ্যোতির্বিজ্ঞানিক বস্তু/Astronomical Objects /Celestial Objects :
অন্যদিকে পৃথিবী সহ মহাবিশ্বের যাবতীয় বস্তুকে খ-বস্তু বা জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তু বা Astronomical Objects /Celestial objects বলা হয়।
২। খ-গোলক(Celestial Sphere):
অন্ধকার এবং মেঘমুক্ত আকাশের দিকে তাকালে আমাদের চোখে পড়ে রাতের অসংখ্য জ্যোতিষ্ককে । পৃথিবী থেকে এই জ্যোতিষ্কগুলোর দূরত্ব অনেক বেশি। এজন্য এদেরকে একটি বিরাট ব্যাসার্ধ্যের গোলকের ভেতরের পৃষ্ঠের কিছু স্থির বিন্দু বলে মনে হয়। পৃথিবী পৃষ্ঠে দণ্ডায়মান একজন দর্শক কেবল এই গোলকের উপরের অর্ধাংশই দেখতে পান।মানে ডিমের অর্ধেক অংশের মত আকাশকে মনে হয়।
এর ভিত্তিতে একজন দর্শককে কেন্দ্র করে অসীম বা যেকোন ব্যাসার্ধ্যের গোলক কল্পনা করা যায়। এই গোলককেই খ-গোলক বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে খ-গোলকের কোন নির্দিষ্ট ব্যাসার্ধ্য নেই।একে
খ-বৃত্ত(celestial sphere/circle)/ গাগনিক বৃত্তও বলা হয়।
চিত্রে দেখুন-
আমরা সকলেই জানি যে পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারনেই প্রতিদিন সূর্য পুর্ব দিকে উদয় হয় পশ্চিমে অস্ত যায়।এখন আমাদের এই বিশাল অর্ধগোলকাকৃতি যে আকাশটিতে সূর্য চন্দ্র ও অন্যান্য জ্যোতিষ্ক গুলো দেখা যায় সেটাকে যদি একটি গোলক চিন্তা করি তবে সেটাকে বলা হবে খ-গোলক ।এই খ-গোলক বরাবর সূর্য ,চন্দ্র ও জ্যোতিষ্কগুলি বছরে একটি নিদিষ্ট পথে পরিভ্রমণ করছে।না বুঝলে কমেন্টে জানাবেন।
https://en.wikipedia.org/wiki/Celestial_sphere
https://en.wikipedia.org/wiki/Astrology_and_astronomy
★সামনে আসছে-
খ বিষুব,
খ উত্তর মেরু,খ দক্ষিণ মেরু,
ভৌগলিক নিরক্ষরেখা/খ বিষুব(Celestial Equator), মহাবিষুব,
জলবিষুব/শারদবিষুব,
বিষুববৃত্ত ,ক্রান্তিবৃত্ত,
নক্ষত্রমণ্ডল,রাহু-কেতু,
অক্ষীয় অয়নচলন,
ধ্রুবতারা সহ অন্যান্য তারার চলন,
ঋতুকাল পাল্টে যাওয়ার কারণ,
১২টি রাশিচক্রের বর্ণণা,রাশিচক্রের খাঁদ,ভন্ডামি ইত্যাদি+
চন্দ্রকলা,অমাবস্যা,পূর্নিমা, এবং সকল প্রকার চন্দ্র, চন্দ্রগ্রহণ,সূর্যগ্রহণের কারণ ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা নিয়ে ধারাবাহিক সিরিজ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন