আবু রায়হান
গ্রামের মুরব্বিরা কাউকে একবার সাপে কামড়ালে ২য় বার আবার কামড় খাওয়াকে খুব ভালো মনে করেন।এতে নাকি বলে বিষ নেমে যায়/ধ্বংস হয়ে যায়।বিষে বিষে বিষক্ষয় প্রবাদটার উৎপত্তি হয়তো এখান থেকেই।
অনেকেই এসব মুরব্বিদের সাপোর্ট দিয়ে কথা বলেন।তাদের যুক্তি-
এন্টিভেনম বা সাপের বিষের প্রতিষেধক ত সাপের বিষ দিয়েই তৈরি করে।
ওয়েট!সাপের বিষ থেকে তৈরি করে তাই বলে কি সাপের বিষ ওটা??
সাপের বিষ এবং এন্টিভেনমের মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ রয়েছে।
যারা ২য় বার সাপের কামড়কে এন্টিভেনমের সাথে তুলনা করতেছেন তাদের জন্যে:
সংক্ষেপে এন্টিভেনম উৎপাদন প্রক্রিয়াটা আগে দেখে তারপর মন্তব্য করবেন।
১. প্রথম ধাপ-
সাপের বিষ সংগ্রহঃ
যে সাপের বিষের এন্টি ভেনম তৈরি করতে হবে প্রথমে সেই সাপের বিষ সংগ্রহ করা হয়।
প্রত্যেক সাপের বিষ আলাদা ধরনের তাই এক সাপের বিষের এন্টি ভেনম অন্য সাপের বিষ ধ্বংস করতে পারেনা।
একটি পাত্রের মুখে কাগজ বা প্লাস্টিক আটকে সেখানে সাপের দাঁত ঢুকিয়ে দিলে ফোঁটায় ফোঁটায় সাপের বিষ ঝরে পড়ে। একই সাপ হতে এভাবে সপ্তাহে একবার পূর্ণ পরিমানে বিষ পাওয়া যায়।
২. দ্বিতীয় ধাপ-
ভেনম ফ্রিজিংঃ
মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় জমিয়ে ফেললে বিষ থেকে জলীয় অংশ আলাদা হয়ে সাপের বিষ গুড়ো পাউডারে রূপান্তরিত হয়।
৩. তৃতীয় ধাপ-
ঘোড়ার শরীরে এন্টি ভেনম উৎপাদনঃ
প্রথমে মূলনীতি জেনে নেই।
সকল প্রাণীরই বাইরে থেকে আসা উটকো সমস্যা গুলো থেকে মুক্তির নিজস্ব প্রতিরক্ষা বাবস্থা রয়েছে।
আমাদের শরীরে বাইরে থেকে কোন রোগ জীবাণু প্রবেশ করলে শরীর নিজে থেকেই তার অ্যান্টিবডি তৈরি করে নেয়।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য; সাপের বিষ শরীরে প্রবেশ করলে তার প্রতিবিষ তৈরি করার ক্ষমতা আমাদের তেমন নেই।
পৃথিবীতে খুব অল্প সংখ্যক প্রাণী নিজের শরীরে সাপের বিষ প্রতিরোধের অসুধ তৈরি করতে পারে।
যেমনঃ গাধা, ভেড়া, ছাগল, খরগোশ, বেজি, মুরগী, উট, ঘোড়া, হাঙ্গর ইত্যাদি।
বেশী রক্ত এবং অনেকদিন বাঁচে আর বারবার ব্যবহার করা যায় বলে বর্তমানে বাণিজ্যিক ভাবে এন্টি ভেনম উৎপাদনের জন্য ঘোড়ার ব্যবহার সর্বাধিক।তবে হাঙরেরটা সবচেয়ে কার্যকরী বাট হাঙর সহজলভ্য নয়।
সাধারণ বিষাক্ত সাপের কামড়ে ঘোড়া মরেনা; তবে অতিরিক্ত বিষাক্ত হলে এবং বিষের মাত্রা বেশিমাত্রায় হয়ে গেলে ঘোড়ার বেঁচে থাকা কামড়ের জায়গা,ঘোড়ার শারীরিক পরিস্থিতি,তাকে প্রদত্ত চিকিৎসার উপর নির্ভর করবে।ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু বিশেষজ্ঞদের এক প্রতিবেদনে দেখা যায় যে মারাত্মক বিষাক্ত Rattle snake কামড়িয়েছে এমন ৫৮টি ঘোড়ার মধ্যে মৃত্যুর হার ছিলো মাত্র ৯%
যাই হোক,
খামারে ঘোড়াকে পূর্বে সংগ্রহ করা সাপের বিষ ইনজেকশনের মাধ্যমে ধমনীতে প্রবেশ করানো হয়। এত ঘোড়া মড়ে না; বরং তার শরীরে এন্টি ভেনম উৎপাদন শুরু হয়ে যায়।
প্রায় ৩ দিন ঘোড়াটি অসুস্থ থাকে; আমাদের যেমন জ্বর হয় অনেকটা তেমন। ৩-৪ দিন পর ঘোড়াটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। তার শরীরের সমস্ত বিষ নষ্ট হয়ে গিয়েছে ততদিনে।
এখন এই ঘোড়াকে একই জাতীয় অন্য কোন সাপ কামড়ালে তার শরীরে তেমন কোন প্রভাব পড়বে না।
৪. চতুর্থ ধাপ-
ঘোড়ার রক্ত থেকে এন্টি ভেনম আলাদাকরনঃ
ঘোড়ার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে তার লাল অংশ আলাদা করা হয়। সাদা অংশ অর্থাৎ ম্যাট্রিক্স থেকে অ্যান্টি ভেনাম আলাদা করা হয়। ঘোড়া বেশ স্বাস্থ্যবান এবং অনেক রক্ত থাকে বলে বেশ ভালো পরিমানে রক্ত নিলেও (গড়ে প্রতি ঘোড়া থেকে প্রায় ৬ লিটার রক্ত নেয়া হয়) ঘোড়ার তেমন ক্ষতি হয়না। এখন এই এন্টি ভেনমের শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে শিশিতে ভড়ে বাজারে সরবরাহ করা হয়।
চিকেন পক্সের এন্টিবডি এবং সাপের বিষের এন্টি ভেনমের মূলনীতি প্রায় একই। চিকেন পক্সের ক্ষেত্রে এন্টিবডি তৈরি করে আমাদের শরীর; আর সাপের বিষের ক্ষেত্রে সেটি তৈরি হয় ঘোড়ার শরীরে। এই এন্টি ভেনম সাপে কাটা রুগির শরীরে ইনজেকশন করলে এন্টি ভেনম শরীরে থাকা ভেনমকে অকার্যকর করে রুগির জীবন বাচায়। বছরের হাজার হাজার মানুষের জীবন এই এন্টি ভেনমের কারনে বেঁচে যায়।
সোর্স:
1.https://en.m.wikipedia.org/wiki/Antivenom
2.https://www.who.int/snakebites/antivenoms/en/
3.https://blog.mukto-mona.com/2014/03/27/40447/
4.https://www.google.com/amp/s/www.zmescience.com/other/feature-post/antivenom-made-precious/amp/
আবু রায়হান,
ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান।
এটার একটা দার্শনিক ব্যাখা আছে।
উত্তরমুছুন