রওনক শাহরিয়ার
হ্যাঁ, তারা ঘুমাই! কিন্তু তাদের ঘুম আমরা সাধারণত বুঝতে পারি না। ঘুম মেরুদণ্ডী প্রাণীদের, বিশেষত পাখি এবং স্তন্যপায়ীদের একটি জৈবিক অবস্থা যা আমরা সচারাচর লক্ষ্য করলে বুঝতে পারি। কিন্তু একাকি বা দলবদ্ধ অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের ঘুমের ব্যাপারে খুব কমই জানা যায়। এজন্য মানুষের মাঝে বিষয়টা নিয়ে ধারণা না থাকায় বিভিন্ন গুজব প্রচলিত আছে। পিঁপড়া তেমনই একটি প্রাণী যারা কখনও ঘুমায় না বলে বিভিন্ন ফ্যাক্ট প্রচলিত আছে। পিঁপড়ার যদি ঘুমিয়ে থাকে তবে তার ঘুম কেমন?
বেশিরভাগ পিঁপড়াই কাজ করে (মূলত শ্রমিক শ্রেণী) এবং দিনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি ঘুমাতে পারে না। একটি ছোট্ট সংখ্যক পিঁপড়া যারা অন্য পিঁপড়াদের শাসন করে (মূলত রাণী পিঁপড়া), তারা ৯ ঘণ্টা ঘুমানোর মতো বিলাসিতা করে।
পিঁপড়ারা কিন্তু মানুষদের মতোই সামাজিক প্রাণী, যেখানে সবাই পরিশ্রমী এবং প্রতিদিনের কাজ সম্পন্ন করে যা তাদের ঘুমের সময়কে কমিয়ে আনে। মানুষদের মতোই পিঁপড়াদের কম ঘুমের জন্য তাদের আয়ু কমে যায় এবং তারা মাত্র ৩ বছর বেঁচে থাকে। যেখানে নিয়মিত ঘুমানোর জন্য রাণী পিঁপড়াদের জীবনকাল দীর্ঘ হয়, তারা প্রায় ৩০ বছরের দীর্ঘ জীবন পাই।
পিঁপড়াদের ঘুমের ধরণ মানুষের থেকে অনেক আলাদা হয়। তারা কোনো সময়সূচি ফলো করে না। কর্মী পিঁপড়ারা দিনে প্রায় ২৫০ বার ঘুমিয়ে থাকে, যার কোনোদিই এক মিনিটের অধিক হয় না। যেখানে রাণী পিঁপড়া দিনে ৯০ বারের বেশি ঘুমিয়ে থাকে, এর কোনোটা ৬ মিনিট পর্যন্ত হয়ে থাকে। কর্মী পিঁপড়ারা অনুর্বর হয় এবং তাদের জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য শুধু রাণী পিঁপড়ার সেবা করা। তারা যখন ঘুমিয়ে থাকে না তখন তারা পাহাড়ায় থাকে বা কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত থাকে। অন্য দিকে পুরুষ পিঁপড়ারা রাণী পিপড়ার সাথে প্রজননে থাকে, কর্মী পিঁপড়াদের এখানে কোনো কাজ নেই।
পিঁপড়ারা মূলত ফেরোমনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে যে তাদের এন্টেনাতে ধরতে পারে। এর মাধ্যমে পিঁপড়ার একাকী বা দলবদ্ধভাবে নিজেদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া ও আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
একটি পিঁপড়ার ঢিবিতে কমপক্ষে ৮০% কর্মী পিঁপড়া জেগে থাকে এবং সবসময় সর্তকতা অবলম্বন করে যেন যখনই প্রয়োজন হয় নিজেদের প্রস্তুত রাখতে পারে ও পিঁপড়াদের বাসস্থানগুলোতে নিয়মিত নজরদারীতে আছে কি না নিশ্চিত করে। আলো অন্ধকার কাজের বাঁধা হয় না। একটি পিঁপড়ার যে ঘুমাচ্ছে তার লক্ষণ হলো, এদের দেখতে মৃত মনে হবে এবং এন্টেনাগুলো নড়বে না। আর রাণী পিঁপড়াদের ঘুম ও জাগার প্যাটার্ন সুসংগঠিত হওয়ায় তাদের ঘুম দীর্ঘ হয় (মুখ খোলা থাকে, এন্টেনাগুলোও মাঝ পর্যায়ে থাকে) এবং তারা সম্ভবত স্বপ্নও দেখে! (REM ফেজে রাণী পিঁপড়াতে লক্ষণীয় কারণ মানুষের REM ফেজে চোখের মুভমেন্টের মতো পিঁপড়াদের এন্টেনা নড়াচড়া করে থাকে!)
সোর্সঃ
https://www.slowsleep.it/en/but-do-ants-sleep/
https://link.springer.com/article/10.1007/s10905-009-9173-4
রওনক শাহরিয়ার
ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন