মনিফ শাহ চৌধুরী
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এমন অনেকেই আছেন যারা ওপরের কথাটা শুনে এসেছেন। এটা প্রচলিত একটা মিথ। হয়তো ছোটবেলায় আপনাকে বুঝ দেয়ার জন্য নানী অথবা দাদী বলেছিল এবং সেটা আপনার মাথায় এখনও রয়ে গেছে।
কলা খাওয়ার সাথে যমজ হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। শৈশবে পাওয়া চাকচিক্যময় তথ্যের গন্ডি হতে বের হয়ে এসে এবার জেনে নেই যমজ কীভাবে হয়।
যমজ সাধারণত দুই প্রকার। একটা identical আরেকটা non-identical. সাধারনত identical twins এর ক্ষেত্রে তারা একই জাইগোট (zygote) থেকে জন্ম নেয়।
জাইগোট কী?
একটি পুরুষ থেকে একটি শুক্রাণু তার নিউক্লিয়াসে থাকা জেনেটিক ম্যাটেরিয়াল বা ডিএনএ একটি স্ত্রীর ডিম্বানুর নিউক্লিয়াসের সাথে নিষিক্ত করিয়ে দেয়। দুটি কোষ এক হয়ে তৈরী করে একটি একক কোষ যাকে আমরা জাইগোট বলি।
এই জাইগোট বহুবার বিভাজিত হয়, একটা ক্লাস্টার বা বল এর মত আকার তৈরি করে, যা আদতে অনেক কোষের সমষ্টি। একটা নির্দিষ্ট স্টেজে এটাকে embryo বলে। এরপর ফিটাস সবশেষে জন্ম।
যাইহোক। এই যে জাইগোটের বহুবার বিভাজনের কথা বললাম, এমন হতেই পারে কোনো একটা কোষ মূল বল আকৃতির সাথে না থেকে কোনোভাবে আলাদা হয়ে গেল। এরপর জরায়ুর অন্য স্থানে যেয়ে সেটে বসে গেল৷ নিজের মত বিভাজিত হতে লাগল। কয়েক মাস পর আমরা কী পাব?
দুইটা ফিটাস। অর্থাৎ দুইটা বাচ্চা। যেহেতু এরা একই embryo থেকে আলাদা হয়ে গেছে তাই এরা আইডেন্টিক্যাল। কারণ এদের মূল জাইগোট শুরুতে একটাই, অর্থাৎ কোনো জেনেটিক ভ্যারিয়েশন নেই। আপনি পেয়ে গেলেন হুবুহু দেখতে একজোড়া সন্তান।
যমজ অন্যভাবেও হতে পারে। যেমন ধরুন আমরা জানি সাধারণত একজন নারী প্রতি মাসে মাত্র একটা Ovum বা ডিম্বাণু Ovary থেকে তার oviduct এ আনতে পারে৷ কিন্তু কখনো কখনো কোনো মাসে দুইটা oviduct এই দুটো আলাদা ovum উপস্থিত থাকতে পারে। যেহেতু এরা আলাদা কোষ, এর মানে হচ্ছে এদের নিজেদের মাঝেও জেনেটিক ভ্যারিয়েশন রয়েছে। আবার এই দুটোর কাছে দুটো আলাদা স্পার্মও পৌছাতে পারে৷ দুটো স্পার্মের মাঝেও আবার জেনেটিক ভ্যারিয়েশন রয়েছে।
এভাবে দুটো আলাদা oviduct এ আলাদা ভাবে নিষিক্তকরণ পরবর্তী দুটো জাইগোট তৈরি হবে এবং এরা জরায়ুতে এসে দুটো আলাদা ফিটাসে পরিণত হবে। যেহেতু তারা আলাদা জাইগোট থেকে এসেছে তাই তাদের মাঝে অনেক পার্থক্য থাকবে। তারা হবে nonidentical twins.
আশা করি এরপর থেকে জোড়া কলা খাওয়া এড়াবেন না। কলা অনেক পুষ্টিকর খাবার, বেচারার নামে এত অপবাদ ছড়ানো ঠিক নয়।
মনিফ শাহ চৌধুরী
ব্যাঙেরা ছাতার বিজ্ঞান
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন