মুভি/সিরিজের ভুল বিজ্ঞান পর্ব - ২

লেখকঃ সমুদ্র জিৎ সাহা
Avengers: Infinity War
থর ও নিউট্রন স্টার

এভেঞ্জার্স এন্ডগেমের এক সিনে দেখা যায় থর নতুন অস্ত্র বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় তাপ জোগাতে নিউট্রন স্টার থেকে আলো বের হওয়ার সুযোগ করে দেয় নিজে আলো বের হওয়ার রাস্তা ধরে রেখে। আলো বের হওয়ার জায়গায় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে। এখানে সমস্যাটা হল থর যে পরিমান যায়গা জুড়ে আলো ব্লক করে বা যে পরিমান আলো/ফোটন তার গায়ে লাগে তার পরিমান এতই যে তা দিয়ে কোটি কোটি, না হলেও লক্ষ লক্ষ গ্রহকে একসাথে আলো দেওয়া যাবে। 
জিনিসটা কত ভয়ংকর এভাবে চিন্তা করুন। পৃথিবীতে সূর্যের আলোর এক বিলিয়ন (১০০ কোটি) ভাগের এক ভাগ আলো আসে, যার ৩৩% আবার প্রতিফলিত হয় আর ৬৬% আমরা দেখি। পুরো পৃথিবীতে পড়া সব আলো একই সাথে একজন মানুষের গায়ে দিলে তার কী হবে!? তার সাথে কয়েক কোটি গুন করুন। এই পরিমান তাপে মহাবিশ্বের যেকোন পদার্থ গলে যেতে, এমনকি প্লাজমায় পরিনত হতে বাধ্য, থর যতই বিশেষ পদার্থের তৈরি হোক না কেন (মার্ভেল ইউনিভার্স মতে)। যদি মার্ভেলের মূল স্বীকার্য হিসেবে ধরে নেন থর গড হিসেবে ইলেক্ট্রিসিটির পাশাপাশি হিট রেজিসট্যান্ট তাহলেও একটা সমস্যা থেকে যায়।

নিউট্রন স্টারের গ্রাভিটি 

নিউট্রন স্টার ছোট কিন্তু ভর বিশাল সাইজের তারার মত, ঘনত্ব অতিরিক্ত বেশি। ছোট হওয়ায় অন্যান্য তারার তুলনায় কোন জিনিস এর অনেক কাছে আসতে পারে। আসলেই পারে কী!?
থর নিউট্রন স্টার থেকে যত কাছে ছিল সেখানে মহাকর্ষ এতই বেশি যে তার পক্ষে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা অসম্ভব। এখন যদি তাও বলেন থর ভাই মহাকর্ষ রেজিস্ট্যান্ট(তাহলে পৃথিবীতে কেমনে থাকে?) তারপরও আরেকটা সমস্যা আছে, ইনভার্স স্কয়্যার ল’ অনুযায়ী এত কাছে মহাকর্ষ বল খুবই দ্রুত কমতে থাকে কাছাকাছি দুরত্বের বস্তুর ক্ষেত্রেও। থরের মাথার পেছনের অংশে প্রতি নিউট্রন স্টার টার মহাকর্ষ বল আর মাথার সামনের অংশের প্রতি মহাকর্ষ বল আকাশ-পাতাল। এতটাই বেশি যে মাথা ছিড়ে আলাদা হয়ে যাবে। শুধু মাথাই না, পুরো দেহ। থর অন্তত এইটা রেজিস্ট্যান্ট হইতে পারেনা। যেহেতু অস্ত্র দিয়ে তার বডি কাটাছেড়া হতে দেখেছি আমরা আগে। ইভেন লোকি তো সামান্য “চাকু” ঢুকিয়ে দিয়েছিল পেটে (The Avengers 2012)

আলো ও গ্রাভিটি কীভাবে দুরত্বের সাথে কমে যায় বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক হারে (মূলত মোট বল/আলো একই থাকে, দুরত্বের সাথে ক্ষেত্র বর্গানুপাতে বাড়তে থাকে) তা বোঝার জন্য একটা ছবি তৈরি করে দিলাম শেষে। 

বোনাস ফ্যাক্টঃ নিউট্রন স্টারের সার্ফেসে একটা কাগজও রাখা যাবেনা(!) তার এপাশ ওপাশের মধ্যে সামান্য দুরত্বের জন্য মহাকর্ষ বলের পার্থক্যের জন্য

নিউট্রন স্টার নিয়ে অসাধারন একটি ভিডিও দেখে আসতে পারেনঃ https://www.youtube.com/watch?v=udFxKZRyQt4

সমুদ্র জিৎ সাহা,
ব্যাঙের ছাডার বিজ্ঞান। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন