বিদ্যুৎ বাহি মানব

লেখকঃ মিনহাজ ইসলাম মিনহাজ

বিদ্যুৎ বাহী মানবগন   প্লাগ পয়েন্টে কারেন্টের তার  খালি হাঁতে সেটা ধরছেন ।   ইলেক্ট্রিক খাম্বার উপরে উঠে খালি হাঁতে তার স্পর্শ করছেন । ২ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে তার হাত খালি, কোনো গ্লাভস নেই । কিন্তু তার পা খালি কিনা সেটা দেখানো হয়নি ।

বিদ্যুতের সাথে খুব সহজেই তুলনা দেওয়া যায় তাপ এর সাথে । তাপ যেমন ছ্যাকা দেয় , শরীরের কোথাও তাপ কিংবা আগুন লাগলে যেমন ফোস্কা পড়ে যায়, কারেন্ট ও তেমনি ছ্যাকা দেয় । কিন্তু এদের ভিতরে পার্থক্য আছে । কারেন্ট জিনিসটা তাপ এর মত না । তাপ জায়গা পেলেই ছ্যাকা দেয় । বাবুর্চি রান্না করার সময় ন্যাকড়া দিয়ে গরম হাড়ি টাচ করে । হাড়ি যদি হাতের কোনো জায়গা খোলা পায়, সাথে সাথে ছ্যাকা দিবে । হাতের খোলা স্কিনের অন্য পাশে কি আছে ,সেটার উপরে তাপের ছ্যাকা দেওয়া নির্ভর করে না ।
কিন্তু কারেন্ট এইভাবে ছ্যাকা দিবেনা । কারেন্ট হিসাব করবে, আমি ওর হাঁতে ছাকা দিয়ে তারপরে চলে যাব কোন পথ দিয়ে ? যে পথ দিয়ে এসেছে, সেই পথেই কারেন্ট ফেরত যেতে পারেনা ,অন্য পথ দরকার হয় । সিম্পল একটা ইলেক্ট্রিক বাল্ব কানেকশনে আপনি ২ টা তার দেখতে পাবেন -একটা তারের ভিতর দিয়ে কারেন্ট আসে, তারপরে বাল্বের ভিতর ঢোকে এবং অবশিষ্ট কারেন্ট অন্য তারটা দিয়ে ফেরত চলে যায় । কারেন্ট তখনই শক দিবে ,যখন কোনো জায়গার ভিতর দিয়ে কারেন্ট পুরোপুরি চলে যাওয়ার জায়গা পাবে ।
মানুষের শরীরের ভিতর দিয়েও কারেন্ট পাস করবে তখনই , যখন পাস করার মত সম্পূর্ন একটা রাস্তা পাওয়া যাবে । অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই রাস্তাটা হয় এইরকম : ইলেক্ট্রিক সোর্স >মানুষের বডি>মাটি । মাটি/পৃথিবী অসীম পরিমান কারেন্ট ও টেনে নিতে পারে । এই জন্য ইলেক্ট্রিশিয়ান এনশিওর করে যে মাটির সাথে তার ডাইরেক্ট টাচ নেই ।হাঁতে গ্লাভস এবং পায়ে জুতা/স্যান্ডেল পায়ে পরে নেওয়া প্রেফারেবল , তাহলেই কারেন্ট গুলা শর্ট সার্কিট হওয়ার জায়গা পাবেনা ,বডির ভিতরেও ঢুকবেনা  ।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেসব ‘বিদ্যুৎ মানব’ পাওয়া গেছে, তাদের হাত পায়ের চামড়া মোটা ।গ্লাভস কিংবা জুতা না পরলেও তাদের চামড়া গ্লাভসের মতই কাজ করে ,কারেন্ট ভিতরে ঢোকেনা  । চায়নার মা জিয়াং গেং এর বডি রেজিস্টান্স এতই বেশি যে তার চামড়ার ভেতর ৬ মিলি এম্পিয়ারের বেশি কারেন্ট কোনভাবেই ঢুকতে পারেনা । সাধারনত ৮/১০ মিলি এম্পিয়ারের চেয়ে কম শক্তিশালী কারেন্ট মানুষের বডিতে পাস করলে কোনো সমস্যা হয়না ।
অন এভারেজ , একজন স্বাভাবিক মানুষের বডির রেজিস্ট্যান্স হয় ২০ হাজার থেকে ৩০ হাজার ওম পার স্কয়ার সেন্টিমিটার । তবে এই ভ্যালুটা ম্যান টু ম্যান ভ্যারি করে । কারেন্ট ক্যারি করার জন্য ধাতব আয়ন দরকার । মানুষের বডির ভিতরে লবনের আয়ন গুলো কারেন্ট ক্যারি করে । সোডিয়াম, পটাশিয়াম,আয়রন আয়নগুলো ইলেক্ট্রন বাহক । যার শরীরে এই আয়নের পরিমান বেশি হবে, তার শরীরের ভেতর দিয়ে বেশি কারেন্ট যাবে ।আর যার শরীরে ধাতব আয়নগুলো কম, তার শরীরের ভিতর দিয়ে কম কারেন্ট পাস করবে । বিদ্যুৎ মানবদের শরীরে ধাতব আয়নের পরিমান অনেক কম বলে তাদের শরীরে বিদ্যুৎ ঢুকতে পারে অনেক কম ।

লো কিংবা হাই, যে কোন ভোল্টেজের তারে ধরা যাবে, তবে তার কিছু প্রসিডিউর আছে। high voltage এর ক্ষেত্রেঃ high impedence এর লাঠি কিংবা অন্য কোন কিছু দিয়ে high voltage এর তার সংযোগ করতে হয়। ফলে ধীরে ধীরে বডির ভোল্টেজ বাড়বে। মনে রাখতে হবে যে, বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় ভোল্টেজের পার্থক্যের কারনে। ধীরে ধীরে ভোল্টেজ বৃদ্ধি পাবার কারনে, শরীরের সকল স্থানে একই ভোল্টেজ দেখা যায়, কোন পার্থক্য থাকে না। এক সময় হাই ভোল্টেজের তারের সাথেও কোন ভোল্টেজ পার্থক্য থাকে না।তখন খালি হাতে তার ধরলেও সমস্যা নাই। তবে সে যদি তার ছেড়ে দিয়ে মাটি স্পর্শ করে তখন শক লাগবে। মাটির সাথে ও একই ভাবে ভোল্টেজ সমতায় এনে তারপরে স্পর্শ করতে হবে।
আবার জেনেটিক মিউটেশানের কারনে তার বডি সেল প্রপারটিজ/ক্যারেক্টারিস্টিক্স পরিবর্তিত হতে পারে।

 মিনহাজ ইসলাম মিনহাজ,
ব্যাঙের ছাতার বিজ্ঞান 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন